Monday 4 July 2016

"বাঁশিওয়ালা"
শ্যামল সোম
আমার নাম তো জানে পাঁচজনে বনলতা সেন ( ছদ্মনাম ব্যবহার করছি সমাজের অনেকেরই মুখোশ খুলে দেবো বলে ।) আশৈশবের স্মৃতি মনে পড়ে যায় কোলকাতায়… প্রাণের কল্লোল শুনতে পাই বাতাসে, আকাশে মেঘ কালো হয়ে এলে ঝাঁপিয়ে ঝড়ের দাপটে জানলা দিয়ে হুড়মুড় করে ঢুকে পড়তো বাতাস, গেয়ে ওঠে মন, " ঝড় ওঠেছে বাউল বাতাস আজকে হলো সাথি…! " বৃষ্টি শুরু হল দৌড়ে চলে যেতাম ছাদে । তখন দশ বছর বয়সে ভিজতে এত ভালো লাগতো, ভিজে সপসপে ফ্রক খুলে বাথরুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেওয়ার পরে শরীর থেকে বের করে নিজেকে আয়নায় দেখে মুগ্ধ হতাম " এ কি লাবণ্য শরীরে, এত রূপ এক ঢাল রেশমী চুল বব ছাঁট -- মাথা ঝাঁকিয়ে নানা রকমের অঙ্গ ভঙ্গি করে নানা ভাবে দেখতাম নিজেকে । মায়া মাসির ডাকে তারাতারি শুকনো নীল ফ্রক পরে বেড়িয়ে আসার পর, মৃদু হেসে বলতেন বনি তুমি দিন দিন দুষ্ট বালিকা হচ্ছো, দুধ খেয়ে পড়তে বসো । মায়ের সাথে বাপির ডিভোর্স হয়ে গেছে আমার ছয় বছর বয়েসে, ব্যভিচারিণী স্ত্রী-র কাছে একগাদা টাকা দিয়ে আমাকে কিনে নিলেন বাপি । বাপির অফিসের কাজে বছরের বেশি সময় ধরেই বাইরে থাকতেন, যৌন সঙ্গী নিয়ে অফিসে, আবার বাড়িতে এসে হাজির হয়ে, দরজা বন্ধ করে দিতেন । নানা রকমের শীৎকার ধ্বনি শুনতাম, বুকের ভেতর ভয় ধাক্কা মারতো । খুব ভয় করতো খুব, যখন একটা লোমশ হাত আমার প্রিয় কোন আত্মীয়, গৃহশিক্ষক বা অপরিচিত কেউ সুযোগ পেলে ঐ লোমশ হাত দিয়ে ফ্রক আলতো করে ধীরে ধীরে তুলে আনতো, আমার সারা শরীর শিরশির করতো, ভয়, অদ্ভূত একটা শিহরণ, ভালোলাগা... কিন্তু নারী গোপন। ব্যাথা করতো, জল গড়িয়ে পড়তো চোখে । এই কি পুরুষের যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছি আমি বিভিন্ন ধরনের লোকের কাছে? ভয় দেখাতো, লজ্জা লাগতো... চোদ্দ পনেরো বছরের পর আমি অস্থির হয়ে উঠতাম । তখন আমি ক্লাস নাইনে পড়ি, হোস্টেলে থাকি বাঁচার আনন্দে মেতে উঠছি । কিন্তু, লেসবিয়ান- সমকামী প্রবণতা আছে এমন মেয়েদের সংস্পর্শে এসে তাদের কাছে পরস্পরকে জড়িয়ে আদর করে এক বিকৃত রুচির আনন্দে মেতে থাকতাম । আমার মনের গোপন বাসনা গুলো পাখা মেলে উড়ে বেড়াতো, মায়ের ঐ ব্যভিচারিণী, স্বৈরাচারিনী পর পুরুষের সাথে অবৈধ সম্পর্ক শৈশবের সে বীভৎস কামনার করাল রূপে আমার রূপসী জননীর ছায়ার আবর্তে ঘূর্ণিঝড়ে খড়কুটোর মতো ভেসে যাচ্ছি অনন্ত সুখের অন্বেষণে... বিভিন্ন ধরনের যুবকের দেহ আমাকে সুতীব্র ভালোবাসায় নয়, শুধুমাত্র শৃঙ্খলাহীন জীবনের অদম্য কৌতূহলের খেসারত দিতে হচ্ছে পুরুষের যৌন নির্যাতন সহ্য করে যৌন সঙ্গী হয়ে । হঠাৎই ভীষণ ভাবে ভালোবেসে ফেলেছি রমেনকে । তখন ফ্যাশন ডিজাইনারের মোটা মাইনের চাকরী । বাপি হার্ট সার্জারি করেও শেষ পর্যন্ত মারা যান । অন্যের সাথে শেয়ার, Live together অভ্যস্ত । জননী অতর্কিতে হানা দিলেন ছলনাময়ী স্নেহময়ী জননীর আবির্ভাব- অবশেষে, বিশাল অঙ্কের টাকা বিনিময়ে আমি ফিরে পেলাম উৎশৃঙ্খল জীবনযাপন । এই ধূসর স্মৃতি রোমন্থনে প্রতিক্ষণে অশ্রু বিসর্জন । আমার মনের উপরে প্রচন্ড চাপ পড়তে মানসিক ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায় পাঁচ মাস হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ছিলাম । এই নেশা মুক্তি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডাঃ হাজরার সু চিকিৎসা পরিষেবা হচ্ছে । দীর্ঘদিনের অনলস প্রয়াসে, আমি meditation ও medicines নেওয়া ফলে ধীরে ধীরে সুস্থ বোধ হতে থাকে । বাপি আমাকে আর মাকেও অবশ্যই আগে বহুবার সিকিম রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় বেড়াতে নিয়ে গেছেন । রমেন নিত্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করতো লিভ টুগেদার সঙ্গী । কিন্তু ভালোবাসার বন্ধন Love bite এর সাথে Love affection সঙ্গে থাকতে থাকতে, কখন আমাদের ভালোবাসা প্রেমে বন্ধন দৃঢ় হয় উঠছে... তবে মাঝে মাঝেই খটকা লাগে মনে, আমার বাপির আমি একমাত্র ওয়ারিশ, মালিকানা পেয়েছি সবকিছুর । রমেন কি ঐ বিপুল সম্পতির লোভে...? বারবার পাঁচ হাজার, তিন হাজার টাকা নিয়ে টানাটানি করতে ইতস্তত করতো না । শুধু বলতো, “বিজনেসের জন্য। লতা তুমি কি আমাকে অবিশ্বাস করছো?” আমি ওর চোখমুখে অভিনয় দেখতাম । "এই লতা কি হলো ওমনি করে তাকিয়ে আছো কেন?” গত কাল একটা বিশ হাজার টাকার চেক সই-সাক্ষর না মেলায় ডাক থেকে পাঠিয়েছে। ঐ বিশ হাজার টাকার চেক আমার সই জাল করে রমেন জমা দিয়ে ছিল । আমি পাগলের মতো চিৎকার করে গর্জে উঠলাম । কাঁচের ফুলদানি ছুঁড়ে মারলাম, “you son of bitch! Impostor! I would not spare you!” রমেন দাঁত মুখ বের করে তেড়ে এসে আমাকে ধাক্কা দিয়ে কার্পেটের উপর ফেলে বুকের উপর বসে গলা টিপে হত্যা করতে চাইছে । ওর হাতে অস্ত্র! শাণিত ছুরি আলোয় উজ্জ্বল চকচক করছে । হঠাৎই দেবদূতের মতো সদলবলে নাটকীয় ভাবে প্রবেশ করলেন তখন বৃহত্তর বালিগঞ্জ প্লেস থানার পুলিশ ইনস্পেক্টর শিশির সেন, “you bastard, just leave her.” বলে রমেনের হাতে ফায়ার করে ক্ষত সৃষ্টি করলেন । রমেন আর্তনাদ করে ছিটকে পড়ে, মৃত্যু যন্ত্রনায় কাতরাচ্ছে, ছটফট করছে । পুলিশ লিখে নিলো, “Encounter” আততায়ীর মৃত্যু । আমি অন্যমনস্ক হয়ে যাই । বারবার ফিরে আসে পুরোনো স্মৃতি… শৈশবে বাপির হাত ধরে সিমলার ম্যালে বা রোটাং পাসে ঝির ঝির ঝরে পড়া তুষার পাত, বাপির কোলে চড়ে তুষার পাতে আনন্দ উপভোগ করা…। কখনও বা দার্জিলিং এর টাইগার হিল এ বাপি গলা জড়িয়ে বাপির শরীরের স্পর্শের উষ্ণতায় তপ্ত দেহের কৈশোরের অনুভূতি… It's true, I loved you dear daddy. বাপি- বাবা, বাবা গো খুব খুব কষ্ট হচ্ছে! Daddy, let me hug to you. Dear wait, I'm coming… আত্মবিলাপ করতে করতে বনলতা, বাপের রাখা নাম লতার চোখের জলে ঝাপসা হয়ে আসছে দৃষ্টি । নিজেই নিজের বাম হাতের কাটা শিরায় রক্তের বিনিময়ে ভেসে মান অভিমান, প্রেম ভালোবাসা যৌন নিগ্রহ, নির্যাতন… বেদনায় নীল হয়ে যাওয়া সব স্মৃতি মুছে যায় dissolved. ঐ তো বাপি বিনয় চৌধুরী ফ্রেঞ্চ কাট দাড়ি- Tall, handsome, like a Prince of my dreamland… আমার কিশোরী বেলার স্বপ্নের মানুষ । রাজপুত্রের তলোয়ার নয়, টেনিস র‍্যাকেট হাতে লন টেনিসের কোর্টে দুর্দান্ত খাপ খোলা তলোয়ার মতোন টেনিস খেলে অনায়াসে জিতে খেলোয়াড় হিসেবে প্রাপ্য সন্মান, রৌপ্য ট্রফি হাত তুলে salutations-এর পর ঘনঘন হাততালির মধ্যেই আমি শ্বেতশুভ্র মুক্তো গহনায় সজ্জিতা পরীর মতো এক দৌড়ে উড়ে গিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়তাম বাপির গলা জড়িয়ে…। ততক্ষণাৎ একঝাঁক সাদা পায়রা শান্তির প্রতীক দূত উড়ে যেত নীল আকাশের গায়ে । আমি ধীরে ধীরে নিস্তেজ হয়ে আসার আগে ভেসে যাচ্ছি সুদূরে ঐ আকাশের খেয়া বেয়ে… ঐ তো আমার বাপি হাসতে হাসতে দু হাত মেলে এগিয়ে আসছে আমাকে নিয়ে যেতে… বাপি I'm coming, reaching soon.
[পুনশ্চ: আমার প্রিয় বান্ধবীর আত্ম বিলাপ । কিন্তু সংকোচ বোধ হয়েছে । কারণ, আর্থ সামাজিক পরিস্থিতির শিকার সর্বনাশের ফাঁসে জড়িয়ে গেছে, যৌন নির্যাতিতা, ভালোবাসা-হীনা হতভাগীর অভিশপ্ত জীবনের গল্প ।]
ফেসবুকে পড়ুন

No comments:

Post a Comment

মনের কথা-Moner Katha