Wednesday 6 July 2016

ফুটপাথে জননী ( সত্য ঘটনা অবলম্বনে প্রতিবেদন) -শ্যামল সোম
কলেজ স্ট্রিটে ফুটপাথে এক গাছের তলায় বৃদ্ধা জননী,শত ছিন্ন শাড়ী পরণে, ছেঁড়া কাঁথা গায়ে, শীর্ণকায় এক দুখী মা, মাগো তোমার আভিজাত্য পূর্ণ চেহারায়, বোঝা যায় সম্ভ্রান্ত পরিবারের শিক্ষিতা রমনী তুমি, চোখে মুখে থমকে আছে আষাঢ়ের মেঘের মতো ঘন কালো মেঘাচ্ছন্ন বিষাদ, দৃষ্টিতে লাঞ্ছিতার হাহাকার। টিভি চ্যানেলের সাংবাদিক প্রশ্ন বাণে ব্যথিত হৃদয় ক্ষত বিক্ষত তবু নাছোড়বান্দা সংবাদ শিকারী সাংবাদিকে স্মৃতির কবর খুঁড়ে, জিজ্ঞেস করলেন, " আপনাকে পেশায় নিযুক্ত ভিখারী মতো দেখে তো মনে হয় না।" দু চোখে জল, মুখে ম্লান সকরুণ স্মৃত হাসি, অনিমেষ শুধু চেয়ে থাকেন, মাঝে মাঝে শোনা যায় গভীর দীর্ঘশ্বাস, নিরুত্তর জননী। " লোক মুখে শোনাগেছে আপনি সতেরোর বাই পাঁচ ঐ নন্দলাল রায় লেনের গোল বারান্দা ঐ থামওয়ালা বড় নীল রঙের বাড়ির ডাঃ এম এন রায়ের বিবাহিত সহধর্মিণী ছিলেন এ কি সত্য ? আপনার শ্বশুরের পিতামহের নামে রাস্তা কি ঐ নন্দলাল রায় লেন? কোন উত্তর না দিয়ে, মাথা নিচু করে বসে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছেন। টিভির ক্যামেরাম্যান শৈলেন সরকার বিভিন্ন পজিশন থেকে ভিডিও ক্যামেরায় ছবি তুলতে হবে। চাঞ্চল্য কর তথ্যবহুল প্রতিবেদন চ্যানেলে প্রচারিত হলে টি আর পি বাড়বে। সাংবাদিকের চাঞ্চল্যকর সংযোজন, " ভদ্র মহিলা কাছ থেকে জানা যায় তার স্বামী অকালে মারা যাওয়ার পর আত্মীয় স্বজন পারিবারিক ব্যবসা সমস্ত টাকাকড়ি আত্মসাৎ করে নেন। পাড়ায় পাড়ায় সেলাইদিদিমণি হয়ে অমানুষিক পরিশ্রম করে, দৈনন্দিন সাংসারিক ও আর্থিক সমস্যার মোকাবিলা করতে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত একা একা তাঁদের একমাত্র সন্তান সোমেন কে কে নামী কষ্ট করে ও স্কুলে ভর্তি করে ছিলেন, ভালো গৃহ শিক্ষক নিয়োগ করে তার সমস্ত আবদার পুরন করতে নিজের শরীর, সাজগোজ তো দূরের কথা, এমন কি কখন একটা ভালো শাড়ি সখ আল্লাহদ বিসর্জন দিতে পিছপা হন নি। পরবর্তি সময়ে সোমেন তিনি ঋণ নিয়ে প্রচুর পরিমাণে অর্থ খরচ করে ইঞ্জিনিয়ার করেছেন। সোমেন নিজের পছন্দ করে বিয়ে করে। কিন্তু বছর দুয়েক পরেই অভিশাপ দিচ্ছি নেমে আসে দৈনন্দিন সাংসারিক কাজ কর্ম, করেও সেলাই এর কাজ অব্যাহত রেখেছিলেন, কিন্তু হঠাৎই সারা জীবন নিজেকে বঞ্চিত করে, অপুষ্টির জন্যে ও পরতিদিনের কঠোর কায়িক পরিশ্রমে শরীর একেবারে শেষ হয়ে গিয়েছিল, রক্তহীনতা, অনিয়মিত রোজ খাওয়া দাওয়া এর ব্যপারে আর্থিক সঙ্কটে বাধ্যহয়ে কার্পণ্য করার জন্যে পেটে ভয়ানক আলসারের পেসেন্ট হয়ে যান। অনামী সাধারণ হাসপাতালের বেদের প্রায় বিনা চিকিৎসায় অপেক্ষায় থাকতেন পুত্রের একমাত্র চোখের মণি নাড়িছেঁড়া সন্তান কখন আসবে, কিন্তু অদৃষ্টের পরিহাস অপেক্ষা অপেক্ষায় থাকা বিনিদ্র রাতে, ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করতেন সন্তানের মঙ্গলের জন্য। অবশেষে একদিন হাসপাতাল থেকে ও বিতাড়িত হয়ে বহু কষ্টে অবসন্ন ক্লান্ত অসুস্থ শরীরটাকে টেনে হিজড়ে নিয়ে উপস্থিত হলেন নিজের স্বামীর বাড়িতে, শুনলেন সে বাড়ি বিক্রি করে কলকাতার কোন পশ এলাকায় বিশাল ফ্ল্যাট কিনে চলে কোথায় চলে গেছে কেউ জানে না কারণ কাউকে ঠিকানা দিয়ে যাই নি। ভদ্রমহিলা তখন মনে পড়ে যায় বিয়ের পরই এ বাড়ির দলিল সংক্রান্ত তথ্য বহুল কতক গুলো কাগজে মাকে বঞ্চিত করার জন্যেই স্বাক্ষর পরিকল্পিত ভাবেই করিয়ে নিয়েছিল, আপন একমাত্র সন্তান কে বিশ্বাস করেই নিঃদ্বিধায় চোখ তুলে স্নেহময়ী জননী মুখ তুলে সন্তানের দিকে, এক মুহূর্ত তাকিয়ে মৃদু হেসে সই করে দিয়েছেন নিজে সর্বনাশে পরোয়ানা। কিন্তু এ তো গেল কাব্যিক ভাবনা। কঠিন বাস্তব নির্মম, দিন দিন প্রতিদিন উদয়াস্ত নির্যাতন, মানসিক ও শেষের দিকে শারিরীক অত্যাচার --গায়ে তোলা বা যায় নিজের একক সত্য গোপন করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু জানুয়ারি সাংবাদিকের পেটের গোপন কথা ফাঁস করে দিলেন টিভির পর্দায় ভেসে উঠলো ভদ্রমহিলার চোখে বাঁধভাঙ্গা জল বারবার জীর্ণ শাড়ির আঁচলে মুছছেন। কিছু দোকানদারের বদান্যতা, আশপাশের এলাকায় কিছু মানুষের দাক্ষিণ্যে দু বেলা দুমুঠো খাদ্য জুটে যেত, শীতে বর্ষা গ্রীষ্ম দেখা যেত আকাশের মুখ তুলে দীর্ঘশ্বাস ফেলে কাটিয়ে চোখের জলে ভেসে বহে যায় জীবন। টিভির পর্দায় আবার কিছুদিন পর ভেসে ওঠে ছবি অশ্রুসজল চোখে, মুখে হাসি, পরণে দামী শাড়ি, ভভদ্রমহিলার কোলে দেব শিশু তাঁকে আদরে আঁকড়ে রয়েছে, আর সুখী ধনী দম্পতি তাঁকে জড়িয়ে ধরে আছেন। টি ভি সাংবাদিকের ভাষ্য ধারাবাহিকতায় জানা যায়, যে টি ভি এই সচিত্র প্রতিবেদন প্রচারিত হওয়ার পরই দুজনেই ডাক্তার স্বামী ও স্ত্রী ডাক্তার সুমন চ্যাটার্জি, ও মৌসুমী চ্যাটার্জি সম্পূর্ণ আদালতে আইন মাফিক জর্জের কাছে আবেদন করে হাজির হয়ে ভদ্রমহিলাকে মাতৃহারা সুমন দত্তক জননী হিসেবে পেতে চেয়ে ছিলেন। জর্জ আবেদনকারীর ওকালতনামায় সানন্দে স্বাক্ষর করে মন্তব্য করছেন, " আজকের দিনে আপন সন্তানের প্রতি ধিক্কার জানিয়েছেন, মায়ের প্রতি এই সন্তানের অমানবিক আচরণের। সাধুবাদ দিয়ে ডাক্তার দম্পতি অত্যন্ত প্রশংসা করে বলেন সমাজের মানুষের কাছে এ একটি বিরল মানবিকতার নিদর্শন হয়ে রইলো যা শিক্ষানিয়। " সবাই মিলে আমারা ঐ জননীর ও ঐ পরিবারের মঙ্গলের জন্য ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি।" এক মানবিক হৃদয়বান, ভালোমানুষ - সত্যিকারের অনন্ত একজন পাঠক আছেন, যিনি মন্তব্য করেছেন। হে কবি, কাঁদিয়েই তবে ছাড়লেন। এইটা যতক্ষণ পড়েছি ততক্ষণ কেঁদেছি। আপনাকে আর ধন্যবাদ দেব না। দেব না অভিমান করে তা নয়। আজ আর ইচ্ছে করছে না তাই!!!! লেখকের প্রতিক্রিয়া-- টি, ভি, যখন এই সংবাদ সচিত্র প্রতিবেদন প্রচারিত হয়েছিল কেঁদেছিলাম, আবার যখন লিখছি তখন ও কেঁদেছি, এখন আমার হৃদয় গ্রাহী মন্তব্য পড়ে কাঁদছি। অন্তত দু এক জন আপনার মতো এখন ভালো মানুষ আছেন।পরম পিতা ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি আপনার মঙ্গল করুন।

No comments:

Post a Comment

মনের কথা-Moner Katha